তবে সাজিদের রুটিন আর ঠিক হল না। ঠিক সাফিনা আসার সময়টা সে বাসায় থাকেই। ড্রইং রুমে চুপচাপ বসে থাকে। পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করে। টিভিতে চ্যানেল চেঞ্জ করে। মূলত টিভি দেখার অভ্যাস তার নাই। পকেট থেকে সেলফোন বের করে স্ক্রীনে আঙুল চালায়। গেম সে খেলে না। ফোনে হয়তো কোনো গেম নেইও। ফেসবুকে ঢুকে। সে ফেসবুকে নিয়মিত না। নোটিফিকেশন তেমন থাকে না।
তনিমা মুখ টিপে হাসে। সান্টু তেমন বাসায় থাকে না। কদাচিৎ থাকলে পাশ কেটে কথা বলে: ভাইয়া, চলো দোকান থেকে চা খেয়ে আসি।
: দোকানে চা খাওয়া বাজে একটা অভ্যাস।
: দোকানে চা খাওয়া ছেড়ে দিলে কবে থেকে?
: তোর তা জানার দরকার আছে?
: চায়ের দোকানে বসা মানেই বিচিত্র জীবনকে উপলব্ধি করা। কত কিসিমের লোক যে সেখানে জড়ো হয়। কত রকমের কত কথা! কবি-সাহিত্যিকদের প্রিয় স্থান চায়ের দোকান।
: আমি তো কবি-সাহিত্যিক না, তুইও না।
: আমি সুর নিয়ে থাকি। প্রতিটা জীবনের যেমন ভিন্ন ভিন্ন গল্প আছে, তেমন আছে ভিন্ন ভিন্ন সুর। বিচিত্র ধরনের সুর আমার বেহালার প্রাণ।
: বাব্বাহ! তোকে দিয়ে হবে।
একসময় সাজিদ ঠিক ঠিক বুঝে গেল, সাফিনার ডিউটি টাইমে বাসায় বসে থাকাটা সবার চোখেই লাগে। সে সিদ্ধান্ত নিল, সাফিনা থাকার সময়টা সে আর বাসায় থাকবে না। সিদ্ধন্তটা নেয়ার পর তার খুব মন খারাপ হলো। মন খারাপ নিয়ে সাফিনা আসার কিছু আগে সে বাইরে চলে যায়।
একদিন কিছু না ভেবেই সাজিদ পথের মোাড়ে একাকি দাঁড়িয়ে রইলো। এ পথ দিয়েই কিছু পরে সাফিনা যাবে। হয়তো রিকশায় অথবা হেঁটে। সাজিদ যতদূর জানে, সাফিনা হেঁটেই যায়। সামনে একটু এগোলে টেম্পু স্ট্যান্ট। সেখানে গিয়ে টেম্পুতে ওঠে। আরও একটু এগোলে বাসও পাওয়া যায়।
সন্ধ্যা হয় হয়। সাজিদের চোখ সাফিনার পথে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কিছুটা ক্লান্ত। হাতের ঘড়িতে সে বার বার সময় দেখছিল। এই সেলফোনের যুগে হাতঘড়ির ব্যবহার উঠে গেছে বললেই চলে। কিন্তু সাজিদ হাতঘড়ি ব্যবহার করে। পকেট থেকে চওড়া আর বড় ফোনটা টেনে বের করে সময় দেখতে তার ভালো লাগে না।
৭.১৫ বেজে গেল। লাইটপোস্ট যেখানে নেই সেখানে অন্ধকার। আকাশে তারা ফুটেছে। অন্ধকার আকাশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে অনেক তারা। কোথাও আবার দল বেঁধে আছে।
তাহলে কি সাফিনা চলে গেছে? নাকি আজ আসেনি? নাকি অন্য কোনো পথে চলে গেছে? এইসব প্রশ্নগুলো নিয়ে যখন সাজিদ আনমনা তখন তাকে চমকে দিল একটা নারীকন্ঠ: আপনি? আপনি এখানে দাঁড়িয়ে?
সাজিদ ঝট করে পাশে তাকিয়ে দেখল রিকশার হুডের ভেতর দিয়ে গলা বাড়িয়ে আছে সাফিনা। অন্ধকারেও তার ফর্সা মুখটা স্পষ্ট। উজ্জ্বল দাঁতে হাসির ঝিলিক।
সাফিনা আবার বলল: কোথাও যাবেন, নাকি গিয়েছিলেন?
কীরকম উত্তর দিলে ভালো হয় সাজিদ তা ভাবতে পারছিল না। আবার হুট করে কিছু একটা বলতেও পারছিল না। সে ইতস্তত করতে লাগল: না মানে…. মানে…..।